করোনার পর বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। এই আশঙ্কার মধ্যেই যারা এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে, তাদের তিন সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে বেলজিয়াম সরকার।

এই ভাইরাস ঠেকাতে পরীক্ষামূলক টিকা আনার ঘোষণা দিয়েছে মডার্না। মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে সম্ভাব্য টিকার পরীক্ষা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মাঙ্কিপক্স গুটি বসন্তের মতোই একটি অসুখ। এটি একটি বিরল রোগ। এই অসুখ প্রথমবার দেখা যায় ১৯৫৮ সালে। তবে, মানুষের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ প্রথমবার দেখা যায় ১৯৭০ সালে।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ কী কী?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মাঙ্কিপক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড সাধারণত ৬-১৩ দিন কিংবা ৫-২১ দিন পর্ন্তও হকে পারে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ব্যথা, পিঠে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফোলা, ঠান্ডা লাগা ও ক্লান্তি।

জ্বর হওয়ার ১-৩ দিনের মধ্যে শরীরে ফুসকুড়ি বের হয়। ফুসকুড়িগুলো মুখ, হাতের তালু, পায়ের তলায়, মুখের শ্লেষ্মা ঝিল্লি ও যৌনাঙ্গের পাশাপাশিও হতে পারে। মাঙ্কিপক্স সাধারণত একটি স্ব-সীমিত রোগ যার লক্ষণগুলো ২-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

মাঙ্কিপক্সের টিকা আছে?

যেহেতু মাঙ্কিপক্স ও গুটিবসন্তের মিল আছে। গবেষণা অনুসারে, ইমভেনেক্স স্মলপক্স ভ্যাকসিন মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর। মাঙ্কিপক্স গুটিবসন্তের তুলনায় কম সংক্রামক ও কম গুরুতর।

ডব্লিউএইচওর মতে, এরই মধ্যে নতুন টিকা তৈরি করা হয়েছে, যা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। গুটিবসন্তের চিকিৎসার জন্য উদ্ভাবিত একটি অ্যান্টিভাইরাল অ্যাজেন্টকেও মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠবিড়ালী, ইঁদুর, বানরসহ তীক্ষ্ণ দাঁতের পশু থেকে বেশি ছড়ায় মাঙ্কিপক্স। এই ভাইরাসের দুটি স্ট্রেইন আছে। কঙ্গো বেসিন স্ট্রেইন পশ্চিম আফ্রিকার স্ট্রেইনের চেয়ে মারাত্মক। তবে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে বিবেচিত হচ্ছে। আশার কথা হলো, এই রোগে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে এখনও শনাক্ত হয়নি।

এই রোগের বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, ‘মাঙ্কিপক্সে জ্বরজনিত অসুখের সঙ্গে ঠান্ডা লাগা, ঘাম, প্রচন্ড মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, শ্বাসকষ্ট এবং কাশি হয়ে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জ্বরের পর ২-৩ দিনের মধ্যে ঘাড়ের চারদিকে এটি দেখা যায়। ১ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ফুঁসকুড়ি তৈরি হয়। ফুঁসকুড়ি প্রায়ই মুখে শুরু হয়, তারপর ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বাকি অংশে। এটি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। মুখমণ্ডল, শরীর, হাত-পা এমনকি মাথার ত্বকেও ফুঁসকুড়ি হতে পারে।

হাতের তালু এবং পায়ের পাতায়ও ক্ষত দেখা দিতে পারে। এগুলো ব্যথাহীন। যদি ব্যথা থাকে তাহলে এটি সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হতে পারে। চুলকানিও থাকতে পারে। হেমোরেজিক এবং ফ্ল্যাট ফর্ম, যা গুটিবসন্তের সঙ্গে দেখা যায়, মাঙ্কিপক্সের রোগীদের ক্ষেত্রে সেটা দেখা যায় না। এই রোগ সাধারণত সেলফ লিমিটেড।’